দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে : বঙ্গবন্ধু

।। জগেশ রায় ।।
শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২

জাতীয় সংসদে ২৫ জানুয়ারি, ১৯৭৫ তারিখে প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব জাতীয় ঐক্য গঠন ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ঘোষণা

জনাব স্পিকার

আজ (২৫ জানুয়ারি, ১৯৭৫ সাল) আমাদের শাসনতন্ত্রের কিছু অংশ সংশোধন করতে হলো। আপনার মনে আছে, যখন শাসনতন্ত্র পাস করা হয়, তখন আমি বলেছিলাম, এই হাউস-এর পক্ষ থেকে এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য যদি দরকার হয় তবে এই সংবিধানেও পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হবে।

জনাব স্পিকার,

আপনি জানেন যে, যুগ যুগ ধরে বাঙালি জাতি পরাধীন ছিল। দুশো বছরের ইংরেজদের শাসন, ২৫ বছরের পাকিস্তানি শাসন এবং শোষণ বাংলাকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। ২৫ বছর পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম করেছিলাম বাংলার মানুষকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। হাজার হাজার কর্মী, নেতা ও জনসাধারণ শুধু কারাবরণই করে নাই, তাদের অনেককে জীবন দান করতে হয়েছিল। শোষকগোষ্ঠী অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। আমরা বহুদিন চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তাদের আঘাত বার বার আমাদের উপর এসেছে। তারপর চরম আঘাত তারা হানে। যে আঘাতের বিনিময়ে আমাদেরও চরম আঘাত হানতে হয়। দুনিয়ার দিকে আজকে আপনারা চেয়ে দেখুন, নিশ্চয়ই আপনি বলবেন স্পিকার সাহেব, আমরা যে আওয়ামী লীগ পার্টি এত ত্যাগ স্বীকার করে সংগ্রাম করেছি; কোনোদিন আমরা আমাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হই নাই। ক্ষমতার লোভে আমরা রাজনীতি করলে আমিও প্রধানমন্ত্রী হতে পারতাম। আর এই নেতৃবৃন্দ অনেক বার মন্ত্রী- অনেক পদ পেতে পারত। কিন্তু আমরা চেয়েছি একটি শোষণমুক্ত সমাজ, আমরা চেয়েছিলাম। বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, আমরা চেয়েছিলাম এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য।

সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা ক্ষমতায় এসেছি, বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি। আমি যখন কারাগারে বন্দী ছিলাম, আমার সহকর্মীরা এবং লক্ষ লক্ষ লোক দেশত্যাগ করে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়। পরাজিত করি আমরা দুশমন বাহিনীকে। আমি নিশ্চয়ই কৃতজ্ঞতা কাশ করব ভারতবর্ষের জনসাধারণ ও সামরিক বাহিনীকে এবং তাঁর সরকারকে। তাঁরা আমাদের সাহায্য করেছিলেন। এক কোটি লোক দেশত্যাগ করে চলে যায়। কোটি কোটি ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়। ৩০ লক্ষ লোক জীবন দিতে বাধ্য হয়। তবুও আমরা চেষ্টা করেছিলাম দেশে যারা রাজনীতি করতে চান, দেশকে ভালোবাসতে চান, নিশ্চয়ই তারা কাজ করবেন এবং তাদের একটা কর্তব্য রয়েছে। কোনো দেশে কোনো যুগে বিপ্লবের পরে বা সশস্ত্র বিপ্লবের পরে ক্ষমতা দখল করে কোনোদিন এইভাবে অবাধ অধিকার এবং অন্যান্য দলকে সুযোগ-সুবিধা দেয় নাই। আমরা দিয়েছিলাম। তার প্রমাণ আমাদের শাসনতন্ত্র। আপনি জানেন স্পিকার সাহেব, কী দেখেছি আমরা তিন বছর হলো স্বাধীনতা পেয়েছি ।

আপনারা জানেন আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা। যারা দেশত্যাগ করে গেল তারা দেশে ফিরে আসল। তাদের রিহেবিলিটেট করতে হবে। রাস্তাঘাট সব ধ্বংসপ্রাপ্ত। আমরা একটা সরকার নিয়েছিলাম। সাড়ে সাত কোটি মানুষের সরকার, যেখানে আমাদের কাগজের নোট ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। তাদের ব্যাক করার মতো আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না, আমাদের গোল্ড রিজার্ভ ছিল না; পাকিস্তানিরা সর্বস্ব এখান থেকে নিয়ে যায়। সেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যে কত কষ্টকর, সে কথা যারা করেছে তারাই বুঝতে পারবে- অন্যরা বুঝতে পারবে না। এ সমস্ত বিপ্লবের পর দেখা গেছে অনেক দেশে লক্ষ লক্ষ লোক না খেয়ে মারা গেছে, তারা আশ্রয় হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি বন্ধুরাষ্ট্রের সাহায্য নিয়ে তাদের পুনর্বাসন করার জন্য। কতটু পেরেছি- না পেরেছি জানি না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, আমাদের কর্তব্য পালন করতে ত্রুটি করি নাই।

স্পিকার সাহেব,

দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, আজ আপনার এই অ্যাসেম্বলী বা সংসদের চারজন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের আগে হত্যা করা হয়েছে যাঁরা এই কন্সটিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলীর মেম্বার ছিলেন। হত্যা করা হয়েছে গাজী ফজলুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে নূরুল হককে হত্যা করা হয়েছে মোতাহার মাস্টারকে। এমনকি যারা কোনোদিন আমাদের দেশে আমরা শুনি নাই যে নামাজে, ঈদের নামাজে কোনো লোক নামাজ পড়তে যায়, সেই নামাজের সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের হত্যা করা হয়েছে, যাঁরা স্বাধীনতার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁদের হত্যা করা হয়েছে, যাঁরা স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল, যারা ২৫ বৎসর পর্যন্ত এই বাংলাদেশে পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন, অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। কোনো একটি রাজনৈতিক দল যাদের অধিকার দিয়েছিলাম তারা কোনোদিন এদের কনডেম করেছে কী-না? তারা কনডেম করে নাই। তাঁরা মুখে বলেছেন যে, তাঁরা অধিকার চান। তাঁরা মিটিং করেছেন, সভা করেছেন পার্টি করতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কী করেছেন? আমাদের সংবিধানে অধিকার দেয়া আছে ভোটের মাধ্যমে তোমরা সরকার পরিবর্তন করতে পার— এই ক্ষমতা আমরা দিয়েছিলাম। বাই-ইলেকশন আমরা ৩ মাসের মধ্যে দিয়েছি। জনগণ ভোট না দিলে তার জন্য আমরা দায়ী নই। তখন তারা বলেছিল, এই সরকারকে অস্ত্র দিয়ে উৎখাত করতে হবে। মুখে বলেছে তারা— আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, নাগরিক অধিকারে বিশ্বাস করি কিন্তু গোপনে গোপনে তারা অস্ত্র যোগাড় করেছে এবং এইসব অস্ত্র দিয়ে যাদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়েছি আমরা যারা অস্ত্র দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে তাদের হত্যা করেছে ঘরের মধ্য যেয়ে। আমরা দেখেছি যে, প্রত্যেক দেশে নিয়ম আছে যদি আপনাকে অধিকার ভোগ করতে হয়, অন্যের অধিকারকেও রক্ষা করতে হয়, ইফ ইউ হ্যাভ এ লিবার্টি ইউ হ্যা রেসপনসিবিলিটি’- এ কথাটা ভুললে চলবে না। কিন্তু রেসপনসিবিলিটি নেবে না আর সেখানে যেয়ে সরকারি কর্মচারীর মধ্যে গোলমাল সৃষ্টি করবে, জনগণের মধ্যে যেয়ে তারা অন্য কথা বলবে এবং তারপর তারা অস্ত্র যোগাড় করবে, রাতের অন্ধকারে মানুষকে হত্যা করবে, সশস্ত্র বিপ্লব করে ক্ষমতা দখল করবে, প্রয়োজন হলে উৎখাত করে দেওয়া হবে। আমি যদি বলতাম যে, আপনারা বক্তৃতার মধ্যে বলেন— উৎখাত করতে হবে আপনারা কবে প্রস্তুত হইয়া উৎখাত করবেন আর আমার যা শক্তি আছে সে শক্তি দিয়ে দুই মিনিটের মধ্যে আমি উৎখাত করতে পারি। আপনাদের কিন্তু তবু আমরা অধিকার দিয়েছি।

আজকে আপনারা জানেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এটা একটা ‘হট বেড অফ ইন্টারন্যাশনাল ক্লিক’। এখানে অর্থ আসে, এখানে মানুষকে পয়সা দেওয়া হয়। এখানে তারা বিদেশিদের দালাল হয়। আজকে একটা কথা এখানে আমাদের ভুললে চলবে না, যে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি, সেই রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা দরকার হলে রক্ষা করা হবে। স্বাধীনতা নস্যাৎ হতে দেওয়া হবে না। এবং তাদের মনে রাখা দরকার আমরা যারা দীর্ঘদিন, ২৫ বৎসর মাথানত না করে বাংলার স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য এদেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছি, আমাদের রক্ত থাকতে এদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার ক্ষমতা কারোর নাই। (হর্ষধ্বনি) অস্ত্র আইয়ুব খান নিয়ে এসেছিলেন, অস্ত্র ইয়াহিয়া খান নিয়ে এসেছিলেন, অস্ত্র ইস্কান্দার মির্জা নিয়ে এসেছিলেন, কোনোদিন তাদের কাছে আমরা মাথানত করি নাই। আজ আমাদের সত্যি অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। আমরা কী নিয়ে শুরু করেছিলাম! ভুললে চলবে কেন যে, সাড়ে সাত কোটি মানুষের একটা দেশ। লোকসংখ্যা কত বেশি এখানে, ৫৪ হাজার স্কোয়ার মাইল, ২৫ বৎসর সমস্ত সম্পদ পাকিস্তানে নিয়ে গেছে। এখানে কেন্দ্রীয় সরকার ছিল না, এখানে রেলওয়ে লাইন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, এখানে পোর্ট ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, এখানে ব্যাংকে আমাদের গোল্ড রিজার্ভ নাই, এখানে ফরেন এক্সচেঞ্জ নাই, এখানে কম্যুনিকেশন নাই, এখানে প্লেন নাই, এখানে গুদামে খাবার নাই— তাই নিয়ে আমাদের সরকার শুরু করতে হয়েছিল। কষ্ট মানুষের আছে, কষ্ট মানুষের অনেক দিন পর্যন্ত করতে হবে- যে পর্যন্ত। দেশকে গঠন করা না যাবে। আজ আমরা নিশ্চয়ই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো কিন্তু দুই তিন বৎসরে না হলেও আমরা ২,১৬৩ কোটি টাকা বিদেশ থেকে এনেছি, সমস্ত মিলে, ফুডে ননপ্রজেক্ট এইড, প্রজেক্ট এইড মিলে দুনিয়ার বন্ধুরাষ্ট্র আমাদের সাহায্য করেছে। তাঁরা দিয়েছেন আমাদের ২,১৬৩ কোটি টাকা। আমরা এ পর্যন্ত খরচ করেছি এদেশের মানুষের জন্য ১,৪০০ কোটি টাকা। আর আমাদের যে আয় প্রায় ৯০০ থেকে ১,০০০ কোটি টাকা তাও আমরা ব্যয় করেছি। এই টাকা আমরা বাংলার মানুষের জন্য খরচ করেছি, যাতে মানুষের কিছু সাহায্য হয়। খাদ্য আমাদের কিনতে হয় বাইরে থেকে। মানুষ না খেয়ে মারা যায়। আমরা যখন স্বাধীনতা পেলাম তারপর থেকে বাংলাদেশে আসল drought, তারপরে হলো দুনিয়াজোড়া ইনফ্লেশন। যে জিনিস কিনতাম এক টাকা দিয়ে সে জিনিস কিনতে হয় আমাদের দুই টাকা দিয়ে যে জিনিস কিনতাম একশো টাকা দিয়ে, সে জিনিস কিনতে হয় দু’শো টাকা দিয়ে। আমাদের দেশের জিনিস যা বিদেশে বিক্রি করতাম, তার ন্যায্যমূল্য আমরা পেলাম না।

আমরা যারা অনুন্নত দেশ, এ কষ্ট আমাদের ভোগ করতেই হয়। কারণ, আমাদের শোষণ করেই তারা বড়লোক হয়। তাদের কাছ থেকে যখন আমাদের জিনিস আনতে হয় তখন অনেক পয়সা দিয়ে আনতে হয়। আর আমরা যখন বিক্রি করি তার দাম আমরা পাই না। এ অবস্থার মধ্যে আমাদের দেশ চলেছে। তার পরেও আমাদের দেশ চালাতে হয়েছে। ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে দুনিয়া ঘুরতে হয়েছে। খাবার দুনিয়া থেকে আনতে হয়েছে, গ্রামে গ্রামে পৌঁছাতে হয়েছে। সমস্ত দুনিয়ায় যে ইনফ্লেশন হয়ে গেল, শুধু আমরা না, সমস্ত দুনিয়ার যারা অনুন্নত দেশ তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আসল এক ভয়াবহ বন্যা। যে বন্যা এত বড় বন্যা আমার জীবনে আমি দেখেছি কি-না সন্দেহ। না ছিল খাবার। পাঁচ হাজার সাতশো লঙ্গরখানা খোলা হলো এবং সেখানে রিলিফ অপারেশন চালানো হলো। বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে নিজেদের যা কিছু ছিল তা-ই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। বাঁচাতে পারলাম না সকলকে। ২৭ হাজার লোক না খেয়ে মারা গেল। এখনও মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। গায়ে তাদের কাপড় নেই। আমি জীবনভর এদের সঙ্গে থেকে সংগ্রাম করেছি, ওদের পাশাপাশি রয়েছি। কারাগারে নির্যাতন ভোগ করেছি। আমার সহকর্মীরা জীবন দিয়েছে। কিন্তু ওদের দুঃখ দূর করার জন্য মানুষের, আমি যে বলেছি একদিন মাননীয় স্পিকার সাহেব, এই হাউসে, আমরা শোষিতের গণতন্ত্র চাই। যারা রাতের অন্ধকারে পয়সা লুট করে যারা বড় বড় অর্থশালী লোক, যারা বিদেশ থেকে ভোট কেনার জন্য পয়সা পায় তাদের গণতন্ত্র নয়- শোষিতের গণতন্ত্র। এটা আজকের কথা নয়, বহুদিনের কথা আমাদের এবং সে জন্যই আজকে আমাদের শাসনতন্ত্র পরিবর্তন করতে হয়েছে।

জনাব স্পিকার,

আমরা আজকে আমাদের কঠিন কর্তব্য পালন করেছি। আমাদের দেশের মানুষ দুঃখী, না খেয়ে কষ্ট পায়। গায়ে কাপড় নেই। শিক্ষার আলো তারা পায় না, রাতে একটা হারিকেনও জ্বালাতে পারে না। নানা অসুবিধার মধ্যে তারা দিন কাটাচ্ছে ।

জনাব স্পিকার সাহেব,

আমরা আমাদের কতগুলো কর্তব্য পালন করেছি আজ। যারা আজকে আমরা যারা শিক্ষিত, এমএ পাস করেছি, বিএ পাস করেছি স্পিকার সাহেব, আপনি জানেন এই দুঃখী বাংলার গ্রামের জনসাধারণ, তারাই অর্থ দিয়েছে আমাদের লেখা-পড়া শেখার একটা অংশ। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, পড়ে পাস করেছেন, আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে পাস করেছি, আজ যারা লেখাপড়া শিখছেন, তাদের খরচের একটা অংশ দেয় কে? আমার বাপ-দাদা নয়, দেয় বাংলার দুঃখী জনগণ। কী আমি তাদের ফেরত দিয়েছি? তাদের আমি রিপে (Ripay) করেছি কতটুকু? তাদের প্রতি কতটুকু কর্তব্য পালন করেছি— এটা আজকে আমাদের সমালোচনার প্রয়োজন আছে। আজ যে একজন ডাক্তার হয়, একজনকে ডাক্তারি পাস করাতে বাংলার দুঃখী মানুষ না হলেও এক লক্ষ টাকা ব্যয় করে। একটা ইঞ্জিনিয়ার করতে না হলেও এক লক্ষ টাকা খরচ পড়ে। একজন এগ্রিকালচার এক্সপার্ট করতে না হলেও এক লক্ষ টাকা খরচ পড়ে। একজন এদেশের দুঃখী মানুষ, যাদের পেটে খাবার নেই, তাদের অর্থেই এদের লেখাপড়া শেখানো হয়েছে। আজ সময় এসেছে আজকে আমাদের বিবেচনা করতে হবে কী তাদের, কতটুকু বা ফেরত দিয়েছি, যার অর্থে তুমি ইঞ্জিনিয়ার হয়েছ, যার অর্থে তুমি আজ গ্র্যাজুয়েট হয়েছ, যার অর্থে তুমি আজ ডাক্তার হয়েছ, যার অর্থে তুমি scientist হয়েছ, যার অর্থে তুমি সমস্ত দেশে মানুষ হয়েছ, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে Professor হয়েছ, যারা লেখাপড়া শিখতেছ তাদের প্রত্যেকটা শিক্ষার জন্য একটি অংশ বাংলার দুঃখী জনগণ দেয়। সেটাই সরকারের টাকা এবং সেই টাকা ব্যয় করে। আজ আত্মসমালোচনার দিন এসেছে। আমরা কতটুকু কর্তব্য পালন করেছি। আমরা কতটুকু তাদের দিয়েছি? শুধু আমাদের দাও। কে দেবে? বাংলার দুঃখী জনগণকে তোমরা কী ফেরত দিয়েছ? এটা আজ প্রশ্ন। আজ আত্মসমালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। দেশকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে হবে। না হলে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা যাবে না। আজ এদের কর্তব্য বুঝতে হবে। আমি আমার কী কর্তব্য পালন করেছি। দুঃখের বিষয়, আজ শুধু আমরা বলি– আমরা কী পেলাম? তোমরা কী পেয়েছ? তোমরা পেয়েছ শিক্ষার আলো, যে শিক্ষা দিয়েছে বাংলার জনগণের টাকায়। তুমি কী ফেরত দিয়েছ বাংলার দুঃখী মানুষকে, যে দুঃখী মানুষ না খেয়ে মরে যায়? যে মানুষের কাপড় নাই, যে মানুষ বন্ধু খুঁজে পায় না, যার বস্ত্র নাই, শার্ট নাই, বুকের হাড়গুলো পর্যন্ত দেখা যায়, তাকে আজকে তোমরা কী দিয়েছ? এ প্রশ্ন আজ এখন জেগে গেছে। আজকে বহুদিন পর্যন্ত বার বার বলেছি। আজকে করাপশনের কথা বলতে হয়। এ বাংলার মাটি থেকে করাপশন উৎখাত করতে হবে। করাপশন আমার বাংলার কৃষকরা করে না। করাপশন আমার বাংলার মজদুর করে না। করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ। যারা আজকে ওদের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করেছি। আজ যেখানে যাবেন, করাপশন দেখবেন। আমাদের রাস্তা খুঁজতে যান করাপশন, খাদ্য কিনতে যান— করাপশন, জিনিস কিনতে যান— করাপশন, বিদেশ গেলে টাকার উপর করাপশন, তারা কারা? আমরা যে ৫ পারসেন্ট শিক্ষিত সমাজ, আমরা হলাম দুনিয়ার সবচেয়ে করাপ্ট পিপল। আর আমরাই করি বক্তৃতা, আমরা লিখি খবরের কাগজে, আমরাই বড়াই করি। আজ আত্মসমালোচনার দিন এসেছে। এসব চলতে পারে না। মানুষকে একদিন মরতে হবে। কবরে যেতে হবে। কিছুই সে নিয়ে যাবে না। তবুও মানুষ ভুলে যায় কী করে এ অন্যায় কাজ করতে পারে !

বহু দুঃখ নিয়ে এ কাজ করতে হয়েছে। বহুদিন পর্যন্ত বিবেকের দংশনে জ্বলেছি। মাথানত করি নাই কোনো অন্যায়ের কাছে। আপোস করি নাই কোনো অন্যায়ের কাছে। জীবনভর সংগ্রাম করেছি। আর এই দুঃখী মানুষ যে রক্ত দিয়েছে, স্বাধীনতা এনেছে, তাদের রক্তে বিদেশ থেকে খাবার আনবো, সেই খাবার চুরি করে খাবে। অর্থ আনবো, সেই অর্থ চুরি করে খাবে। টাকা আনবো, তা বিদেশে চালান দিবে। বাংলার মাটি থেকে এদের উৎখাত করতে হবে।

স্পিকার সাহেব,

এই বক্তৃতা থেকেই আমি ওয়াদাবদ্ধ হয়েছি। আজ আমাদের কী অবস্থা? আজ আমার পপুলেশান কনট্রোল করে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হয়, ভিক্ষুকের জাতের কোনো ইজ্জত আছে? দুনিয়ায় জীবনভর ভিক্ষা পাওয়া যায়? স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। সেজন্য কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন রয়েছে। কাজ করবো না, ফাঁকি দিব; অফিসে যাব না, ফাঁকি দিব । ফ্রি-স্টাইল । ফ্রি-স্টাইল মানে গণতন্ত্র নয়। অফিসে ১০টার সময় যাওয়ার কথা বলে ১২টার আগে যাব না! ৫টায় ছুটি হলে ৩টায় ফিরে আসতে হবে। কারখানায় কাজ করবো না! পয়সা দিতে হবে। আমার শ্রমিকরা খারাপ না। আমার শ্রমিকরা কাজ করতে চায়। আমার কৃষক আজ কাজ করতেছে। Food production এগিয়ে গেছে। আমরা ব্যাঘাত সৃষ্টি করি। আমরাই ষড়যন্ত্র করি। আমরাই ধোঁকা দিই। আমরাই লুট করে খাই। জমি দখল করে নিয়ে যাই। এ সকল কাজ করে কারা? আমরা এই দেশের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ, এদেশের তথাকথিত লেখাপড়া জানা মানুষ। যাদের পেটের মধ্যে দুই অক্ষর বুদ্ধি বাংলার ওইসব দুঃখী মানুষের পয়সায় এসেছে তারা আজকে এ কথা ভুলে যায়। কথা হলো আমি কী পেলাম আর আমি কী দিলাম। আজ সেখানেই প্রশ্ন।

আমি বার বার বলেছি- আজকে আমাদের আত্মসমালোচনার প্রয়োজন, আজকে আমাদের আত্মসংযমের প্রয়োজন। আজকে আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন, নচেৎ দেশকে ভালোবাসা যায় না এবং দেশের উন্নতি করা যায় না। কলে কারখানায়, ক্ষেত-খামারে আমাদের production বাড়াতে হবে। তা না হলে দেশ বাঁচতে পারে না। কী করে আপনি করবেন? যদি ধরেন ২০ লক্ষ টন খাবার বছরে deficit হয়। এই তিন বছর পর্যন্ত গড়ে এর চেয়ে অনেক বেশি মাল আনতে হয়েছে। প্রথম আনতে হয়েছে ৩০ লক্ষ টন। পাঁচশোঁ ৪০ লক্ষ মণ খাদ্য যাদ ধরুন গড়ে প্রত্যেক বৎসর আনতে হয় বিদেশ থেকে, কোথায় পাওয়া যাবে, কে দেবে? জাহাজ ভাড়া কোথায়? ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টন প্রতি বছর আমাদের আনতে হয়েছে বিদেশ থেকে এই তিন বছরে। বন্ধুরাষ্ট্ররা সাহায্য করেছে। গ্র্যান্ট দিয়েছে, লোন দিয়েছে, আনতেছি। খাবার দেবার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। কতকাল দেবে? কদ্দিন দেবে? মানুষ বাড়ছে! বছরে ৩০ লক্ষ লোক আমার বাড়ে। আজকে আমাদের পপুলেশান প্লানিং করতে হবে। পপুলেশন কন্ট্রোল করতে হবে । না হলে ২০ বৎসর পর ১৫ কোটি লোক হয়ে যাবে। ২৫ বছর পরে? ৫৪ হাজার স্কোয়ার মাইল, বাঁচতে পারবে না। যে-ই ক্ষমতায় থাকুন বাঁচার উপায় নাই। অতএব পপুলেশান কন্ট্রোল আমাদের করতেই হবে। সেজন্য ডেফিনিট স্টেপ আমাদের নিতেই হবে বাংলাদেশে। প্রেডাকশন বাড়াতে হবে। না হলে মানুষ বাঁচতে পারবে না। প্রোডাকশন বাড়াবার জন্য শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে হবে। বিশৃঙ্খল জাতি কোনোদিন বড় হতে পারে না। উচ্ছৃঙ্খল হয়ে গেছি আমরা। ফ্রি-স্টাইল। এটা হবে না, ওটা হবে না, আর যাকে অ্যারেস্ট করব, বলবে যে অমুক পার্টির লোক। একে অ্যারেস্ট করলে বলবে অমুক পার্টির লোক। খবরের কাগজে বিবৃতি! জিনিসপত্র এক জায়গায় দাম একদিন হঠাৎ ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা হয়ে গেল। খবরের কাগজে ছাপিয়ে দিল, হোল্ বাংলাদেশে ২০০ টাকা হয়ে গেল; যেখানে সমস্ত কিছুর অভাব সেখানে দুনিয়া থেকে সবকিছু কিনতে হয়। আমরা কলোনি ছিলাম। আমরা কোনো জিনিস সেল্‌ফ সাফিসিয়েন্ট না। আমরা ফুডে সেল্‌ফ সাফিসিয়েন্ট না, আমরা কাপড়ে সেল্ফ সাফিসিয়েন্ট না, আমরা তেলে সেল্‌ফ সাফিসিয়েন্ট না, আমরা খাবার জিনিসে সেল্‌ফ সাফিসিয়েন্ট না। আমাদের র-ম্যাটিরিয়েলস কিনতে হবে, ঔষধে সেল্‌ফ সাফিসিয়েন্ট না। আমরা কলোনি ছিলাম পাকিস্তানিদের। আমাদের সবকিছু প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সবকিছু বিদেশ থেকে আনতে হবে, কোথায় পাবেন বৈদেশিক মুদ্রা আপনারা? ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হবে, ইনকাম করতে হবে। স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। যে মানুষ ভিক্ষা করে তার যেমন ইজ্জত থাকে না, যে জাতি ভিক্ষা করে তারও ইজ্জত থাকে না। ভিক্ষুক জাতির নেতৃত্ব করতে আমি চাই না। আমি চাই আমার দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক এবং সেই জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। শৃঙ্খলা আনতে হবে এবং শৃঙ্খলা দেশের মধ্যে আনতে হবে।

আজকের এই সংশোধন কম দুঃখে করি নাই, স্পিকার সাহেব। যারা জীবনভর সংগ্রাম করেছে, একথা যদি কেউ মনে করে যে, জনগণের ভোটের অধিকার আমরা কেড়ে নিয়ে গেছি- নো, আজ এখানে যে সিস্টেম। করা হয়েছে তাতে পার্লামেন্ট-এর মেম্বারদের জনগণ দ্বারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। যে প্রেসিডেন্ট হবে তাকেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার আছে। তবে এইটুকু, আমরা আজকে একটা কোর্টে বিচারে গেলে একটা যদি সিভিল মামলা হয় আপনি তো উকিল, স্পিকার সাহেব। আল্লাহর মর্জি যদি একটা মামলা সিভিল কোর্টে। হয়, ২০ বৎসরেও সে মামলা শেষ হয়, বলতে পারেন আমার কাছে? বাপ মরে যাবার সময় বাপ দিয়ে যায় ছেলের কাছে। আর উকিল দিয়ে যায় তার জামাইর কাছে সেই মামলা। আর ক্রিমিনাল কেস হলে এই লেয়ার কোর্ট, জজ কোর্ট- বিচার নাই! জাসটিস ডিলেড জাসটিস ডিনাইড- উই হ্যাভ টু মেইড এ কমপ্লিট চেইঞ্জ এবং সিস্টেমের মধ্যে পরিবর্তন করতে হবে। মানুষ যাতে সহজে বিচার এবং সঙ্গে সঙ্গে বিচার পায়। ব্যাপক পরিবর্তন দরকার। কলোনিয়াল পাওয়ার এবং রুল নিয়ে দেশ চলতে পারে না। নতুন স্বাধীন দেশ স্বাধীন মতবাদ, স্বাধীনভাবে দেশ শাসন করতে হবে। যেখানে জুডিসিয়াল সিস্টেম-এর অনেক পরিবর্তন দরকার। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। কোনো কথা শুনি না। কলে-কারখানায় কাজ করতে হবে। কাজ করে প্রোডাকশন বাড়াও। নিশ্চয়ই তোমরা তার অধিকার পাবে। কাজ করবে না, পয়সা নেবে; সে পয়সা হবে না। কার পয়সা নেবে? গরিবের উপর ট্যাক্স বসাবো? খাবার আছে তার কাপড় আছে তার? তার ঘর থেকে ধন কোথেকে আনি? পারব না। তোমাদের কাজ করে প্রোডাকশন বাড়াতে হবে। ক্ষেত-খামারে কাজ না করলে তোমরা জমির উপর থাকতে পারবে না। আমার সেখানে প্রোডাকশান বাড়াতে হবে ৷

জানি, আমাদের অসুবিধা আছে। বন্যা আমাদের নিয়ন্ত্রণ হয় নাই। আমাদের বন্যা হয়ে যায় প্রত্যেক বৎসর, সাইক্লোন হয় প্রত্যেক বৎসর, ন্যাচারাল ক্যালামিটি হয়— সেটা বোঝা গেল । আজ আমাদের কথা কী— আজ শোষণহীন সমাজ গড়তে হবে। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আজকের থেকে নয়। আপনি মেম্বার ছিলেন প্রথম দিন থেকে স্পিকার সাহেব। আপনি জানেন এই দল লক্ষ্য নিয়ে সংগ্রাম করেছে। কারো কাছে কোনোদিন আপোস করে নাই, মাথা নত করে নাই। আজ দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, কালোবাজারী, নতুন পয়সাওয়ালা এদের কাছে আমার আতাবিক্রি করতে হবে? এদের অধিকারের নামে আমাদের এদেরকে ফ্রি-স্টাইলে ছেড়ে দিতে হবে? কক্ষনো না। কোনো দেশ কোনো যুগে তা দেয় নাই। দিতে পারে। না। যারা আজকে আমার মাল বিদেশে চালান দেয়, চোরাকারবারী করে, যারা দুর্নীতি করে, এদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। মানুষ যারা পয়সা দেয়, তোমার মাহিনা দেয় তোমার সংসার চালানোর জন্য ট্যাক্স দেয় তার কাছে তুমি আবার পয়সা খাও। মেন্টালিটি চেইঞ্জ করতে হবে। সরকারি কর্মচারী, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট– আমরা জনগণের সেবক, আমরা জনগণের মাস্টার নই। মেন্টালিটি আমাদের চেইঞ্জ করতে হবে। আর যাদের পয়সায় আমাদের সংসার চলে, যাদের পয়সায় আমাদের রাষ্ট্র চলে, যাদের পয়সায় আজ আমাদের অ্যাসেম্বলী চলে, যাদের পয়সায় আমরা গাড়ি চড়ি, যাদের পয়সায় আমরা পেট্রোল খরচ করি, আমরা কার্পেট ব্যবহার করি, তাদের জন্য কী করলাম? সেটাই আজ বড় জিনিস।

আমি সেদিন গিয়েছি কুমিল্লা পর্যন্ত। একটা প্রশ্ন করেছি— তোমরা না খেয়ে মরছ, খাবার চাল নাই, গায়ে তোমাদের কাপড় নাই, তোমরা কেন আমাকে দেখতে এসেছ? তোমরা কেন আমাকে ভালোবাস। আমি তা বুঝতে পারি। রাস্তার দু’পাশে হাজার হাজার লোক। আমি সহকর্মীদের কাছে বার বার বলেছিলাম যে, আমি আমার কাজ করেছি, তোমরা এবার আমাকে ছুটি দাও। বলেছি বহুদিন। ৩৫ বৎসর, আমি এদেশে ১৯৩৮ সালে, আমার যখন বাচ্চা বয়স তখন আমি জেলে গেছি। তারপর থেকে একদিনও আমি বিশ্রাম করি নাই, আমি রাজনীতি করেছি। অত্যাচার আমি যা সহ্য করেছি সে সব বাদ দেন। যারা, কত লোক মারা গেছে, আমার চেয়ে অনেক মানুষ বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে, দেশে আমি সংগ্রাম করেছি আমার সহকর্মীদের নিয়ে। কিন্তু একটা খেলা হয়ে গেছে। বাজার নিয়ে খেলে, দাম নিয়ে খেলে, বেশি অসুবিধা হলে গোপনে গিয়ে নিউজ দেয়— এই নিউজটা একটু ছাপিয়ে দেন। আর অমনি গোলমাল লেগে গেল। ঐ যে— বক্তৃতা আরম্ভ করে দিলাম। ফ্রি-স্টাইল চলে না। সাড়ে সাত কোটি মানুষ— ৫৪ হাজার বর্গমাইলে। বিদেশ থেকে খাবার আনতে হয়, কাপড় আনতে হয়, কোনো কিছু চলতে পারে না এখানে Free style চলে না। প্রোডাকশন বাড়াতে হবে। ক্ষেত-খামারে উৎপাদন করতে হবে। মানুষ হতে হবে। ছাত্র সমাজের লেখাপড়া করতে হবে। লেখাপড়া করে মানুষ হতে হবে। জনগণ টাকা দেয় ছাত্রগণকে মানুষ হবার জন্য। সে মানুষ হতে হবে— আমরা যেন পশু না হই। লেখাপড়া শিখে আমরা যেন মানুষ হই। কী পার্থক্য আছে জানোয়ারের সঙ্গে আর আমাদের? যে জানোয়ার একটি মানুষের বাচ্চাকে কামড়িয়ে ধরে খেয়ে ফেলে দেয়, আর একটি মানুষ বুদ্ধিবলে এখান থেকে পয়সা নিয়ে তাকে না খাইয়ে মারে? কী পার্থক্য আছে। জানোয়ার আর মানুষের মধ্যে? যদি মনুষ্যত্ব আমি হারিয়ে ফেলি তাহলে মানুষ কোথায়? প্রথমেই আমাকে মনুষ্যত্ব আনতে হবে, তবে আমি মানুষ হবো। না হলে মানুষ আমাকে কেন বলা হয়। Because আমার মধ্যে মনুষ্যত্ব আছে। যখন মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলি তখন তো আমি মানুষ থাকি না। আমরা মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছি।

আমি সকলের কাছে আবেদন করব, আমি দেশবাসীর কাছে আবেদন করব, আজ যে শাসনতন্ত্র, আজকে আমার দুঃখ হয়, আজ আপনারা আমাকে এই কনস্টিটিউশন অ্যামেন্ডমেন্ট-এর সঙ্গে আমাকে প্রেসিডেন্ট করে দিয়েছেন। আমার তো ক্ষমতা কম ছিল না। প্রাইম মিনিস্টার হিসেবে সমস্ত ক্ষমতা আপনারা আমাকে দিয়েছিলেন। আমরা টু-থার্ড মেজরিটি; তবু আপনারা অ্যামন্ডমেন্ট করে আমাকে প্রেসিডেন্ট করেছেন। এই সিটে আমি আর বসব না— এটা কম দুঃখ আমার স্পিকার সাহেব? তবু আজকে আমূল পরিবর্তন করেছি শাসনতন্ত্রকে। কারণ সুষ্ঠু শাসন কায়েম করতে হবে। যেখানে মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে। যেখানে মানুষ অনাচার-অত্যাচার থেকে বাঁচতে পারে। চেষ্টা নতুন, আজ আমি বলতে চাই This is our second revolution-second revolution আমাদের এই revolution এর অর্থ দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। এর অর্থ অত্যাচার, অবিচার, নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। আমি চাই এই হাউস থেকে স্পিকার সাহেব, আপনার মাধ্যমে দেশবাসী দলমত নির্বিশেষে সকলকে বলব, দেশকে ভালোবাস, জাতির চারটি প্রিন্সিলকে ভালোবাস। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সেক্যুলারিজম। তোমরা আসো, কাজ করো, দরজা খোলা। সকলকে, যারা এই মতে বিশ্বাস করে তাদের প্রত্যেককে Consitution (কন্সটিটিউশন) করো, আসো কাজ করো। দেশকে রক্ষা করো। দেশকে বাঁচাও। মানুষকে বাঁচাও। মানুষের দুঃখ দূর কর। আর দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর চোরাকারবারীদের উৎখাত কর। আর একটা দল– তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলাম আমরা। কোনো দেশে করে নাই। স্পিকার সাহেব,আপনিও তো ছিলেন। কোনো দেশের ইতিহাসে নেই? পড়েন দুনিয়ার ইতিহাস। বিপ্লবের পরে বিপ্লবকে বাধা দিয়েছে যারা, শত্রুর সঙ্গে সহযোগিতা করেছে, যারা এদেশের মানুষকে হত্যা করেছে তাদের কোনো দেশে কোনো যুগে ক্ষমা করে নাই। কিন্তু আমরা করেছিলাম। সবাইকে। ক্ষমা করেছিলাম। বলেছিলাম দেশকে ভালোবাস, দেশের জন্য কাজ কর, স্বাধীনতাকে গ্রহণ করে নাও, থাকো। কিন্তু অনেকের পরিবর্তন হয় নাই । তারা এখনও গোপনে বিদেশিদের কাছ থেকে পয়সা এনে বাংলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা মনে করে যে, খবর রাখি না। এতবড়— যারা আজকে একটা Bandit (ব্যান্ডিট) মানুষকে রাতের অন্ধকারে হত্যা করে, সে মনে করেছে তাকে কেউ ধরতে পারবে না। তাকে যদি ধরা যায়, আজ তার দলবল সবাইকে যদি ধরা যায়, ধরতে পারবো না কোন অফিসার ঘুষ খান? ধরতে পারবো না যদি অন্ধকারে যেয়ে বিদেশের পয়সা খান? ধরতে পারবো না কারা? hoarder (হোর্ডার) আছেন? ধরতে পারবো না কারা Black Marketing- এ (ব্ল্যাক মার্কেটিং) আছেন। নিশ্চয়ই ধরতে পারব! সময়ের প্রয়োজন। যেতে পারবে না কেউ ইনশাল্লাহ পাপ একদিন ধরা দিবেই, এটা মিথ্যে হতে পারে না। আর কোনোদিন দুনিয়ার পাপ আর পুণ্য পাশাপাশি চলতে পারে না। পুণ্য চলে একদিকে আর পাপ চলে আরেকদিকে! Vice and virtue can’t mix together, we should not forget it আমরা যাদের ক্ষমা করেছিলাম, তারা গ্রামে গ্রামে বসে আমাদেরকে দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে আজকে কটাক্ষ করে। বন্ধ করে দেওয়া হবে সব। তাদেরকে অধিকার দেওয়া হবে স্বাধীনতা নস্যাৎ করার জন্য? কোনো দেশে দেয় নাই, আমরা দিয়েছিলাম মাফ। মাফ যদি হজম করতে না পারা যায় তাহলে কেমন করে কঠোর হস্তে দমন করতে হয় তাও আমরা জানি। আজ আমাকে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে এ কথা বলতে হচ্ছে।

আজকে amended constitution-এ (অ্যামেন্ডেড কনস্টিটিউশন) যে নতুন সিস্টেমে আমরা যাচ্ছি, এটাও গণতন্ত্র। শোষিতের গণতন্ত্র। এখানে জনগণের ভোটাধিকার থাকবে। এখানে আমরা সমাজতন্ত্র করতে চাই। আমাদের শোষিতের গণতন্ত্র রাখতে চাই। সাম্প্রদায়িকতার বীজ বাংলার মাটিতে কোনোদিন আসতে পারবে না, আমরা allow (এলাউ করবে না। বাংলাদেশকে ভালোবাসব না বাংলার মাটিকে ভালোবাসব না, বাংলা ভাষাকে ভালোবাসব না, বাংলার কালচারকে ভালোবাসন না, আর এখন পর্যন্ত বিকজ আমি ফ্রি-স্টাইল দিয়ে দিয়েছিলাম। যার যা ইচ্ছা তারা তা লেখে। কেউ এ নামে বাংলাদেশকে ডাকে, ও নামে বাংলাদেশকে ডাকে, বাংলাদেশের নাম পর্যন্ত বলতে তারা লজ্জাবোধ করে, তাদের অধিকার নাই বাংলার মাটিতে থাকার। যেমন নাই চোরাকারবারী, ঘুষখোর, যেমন নাই দুর্নীতিবাজদের; তেমন নাই ওই সমস্ত সন্ত্রাসবাদী— যারা মনে করে ভুলে যান, ভুলে যান, ভুলে যান বাংলার মাটি, বাংলার নাড়ী মানুষ জানি।

স্পিকার সাহেব, ঐ রাত্রের বেলায় দু’জনকে মেরে বিপ্লব করা যায় না। এ আওয়ামী লীগ- বোধ হয় এরকম দশ বিশ বছর আগে আরম্ভ করতে পারতাম। দশটাকে মারলাম, পাঁচটাকে মারলাম, তাতে বিপ্লব হয় না। এটা ডাকাতি হয়। ওটা খুনই হয়। ওটা মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করা হয়। বাগেরহাটের একটা জায়গাতে, চার ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাইকে রাত্রে এসে গুলি করে মেরেছে। এটা কি একটা পলিটিক্যাল ফিলোসফি? এ ফিলোসফি দুনিয়ার পচা-গন্ধ ডাস্টবিনের মধ্যে নিক্ষেপ হয়ে গেছে। এ ফিলোসফিতে কোনোদিন দেশের মধ্যে মুক্তি আসতে পারে না এবং কোনোদিন তা সাকসেসফুল হতে পারে না, হতে পারে না। এটা শেষ। আন্দোলনের মধ্যেই আমার জন্ম। আমি তো আন্দোলনের মধ্যেই মানুষ আন্দোলন আমি জানি। কিন্তু আজ কী দেখতে পাচ্ছি? ফ্রি-স্ট্রাইল! ওরা কিন্তু (এনজয়িং দ্যা ফুল লিবার্টি)- যার যা ইচ্ছা। বিদেশিরা আসেন এখানে, গোপনে দু’বোতল মদ খাইয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্রিফ করে দেয়া হয়। ওরা মনে করেন, খবর রাখি না? আমরা খবর রাখি। বাংলাদেশের নিশ্চয়ই আজ তিন বছরের মধ্যে আমরা বলতে পারবো আমরা কিছু করেছি। আপনাদের কি গভর্নমেন্ট ছিল? কেন্দ্রীয় গভর্নমেন্ট ছিল? ছিল আপনাদের ফরেন অফিস? ছিল আপনাদের ডিফেন্স অফিস? ছিল আপনাদের প্লানিং? ছিল আপনাদের ন্যাশনাল ফিন্যান্স? ছিল আপনাদের কাস্টম? ছিল আপনাদের কী? কী নিয়ে আরম্ভ করেছিলাম আমরা? উই হ্যাভ নাউ অরগানাইজড এ ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড এফেকটিভ ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট, ইনশাল্লাহ। বেটার দ্যান মেনি কানট্রিজ। আই ক্যান চ্যালেঞ্জ। বিদেশ থেকে খাবার আনতে আমাদের বহু সময় লেগে যায়। অনেক এফিসিয়েন্ট গভর্নমেন্ট দেখেছি। কিন্তু আমরা যেখানে কম্যুনিকেশন নাই, যেখানে কিছুই নাই, সেখানে আমরা দেখতে পেরেছি পনেরো দিনের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রামে পাঁচ হাজার সাতশো লঙ্গরখানা খুলে মানুষকে বাঁচাবার মতো এফিসিয়েন্সি এ দেশের গভর্নমেন্টের আমরা দেখেছি। হয় না কি? নিশ্চয়ই হয়েছে। কোনোদিন কেউ স্মাগলিং বন্ধ করতে পেরেছে? আমরা নাইনটি ফাইভ পারসেন্ট স্মাগলিং বন্ধ করতে পেরেছি। এই গর্ব আমাদের আছে। আমরা অর্থনীতির কাঠামো সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছি। অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেট-আপ করেছি। আজ আমরা আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স, রক্ষীবাহিনী, পুলিশ, বিডিআর আমরা সমস্ত অরগ্যানাইজড করেছি। কী নিয়ে আমরা আরম্ভ করেছিলাম?

আজ আপনি বসে আছেন স্পিকার সাহেব এ এসেম্বলীর মধ্যে কী ছিল আমাদের? বলেন কী নিয়ে আরম্ভ করেছিলাম? আজকে এই অবস্থার মধ্যে দেশকে চলতে দেওয়া যায় না। আমাদের পরিবর্তন দরকার। কিন্তু শুধু পরিবর্তন করেই দেশের মুক্তি আসে না। যদি মানুষের মেন্টাল পরিবর্তন না হয়। এবং সে জন্য আজকে শুধু আমরা যারা এখানে উপস্থিত আছি, যারা জনগণের প্রতিনিধি, জনগণের ভোটের মাধ্যমে এসেছি, আমাদের কর্তব্য সঙ্গে সঙ্গে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে, দলমত নির্বিশেষে বাংলার জনগণ যে যেখানে আছেন আজকে থেকে আমরা প্রতিজ্ঞা করি স্পিকার সাহেব যে, আমরা নতুন জীবন শুরু করব, আমরা নতুন বিপ্লব শুরু করব। কেন করতে পারব না? পারি নাই ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত আমরা ঘরে বসে তিন চারজনকে নিয়ে সমস্ত বাংলার মানুষের মুভমেন্ট আমরা চালাই নাই? একটা চুরি হয় নাই, একটা ডাকাতি হয় নাই, ভল্যান্টিয়াররা কাজ করেছে। নতুন জীবন সৃষ্টি করতে হবে। উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে হবে। মানুষকে মোবিলাইজ করতে হবে। মানুষ ভালো। বাংলার মানুষের মতো মানুষ কোথাও নাই। বাংলার গরিব, বাংলার কৃষক ভালো, বাংলার শ্রমিক ভালো। যদি খারাপ হয়, তবে আমরা তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ। যত গোলমালের মূলে এই তারাই। যত অঘটনের মূলে তারাই। কারণ তারাই হলেন ভোকাল শ্রেণি ৷ তারা বক্তৃতা করেন, তারা কাগজে লেখেন। তারা এখানে করেন, ওখানে করেন। তারা আছেন বেশ, এ অবস্থায় দেশ চলতে পারে না। সে জন্যেই শাসনতন্ত্র আমাদের পরিবর্তন (অ্যামেন্ড) করতে হয়েছে। এখন আমাদের সামনে কাজ কী? এক– দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে। কলে-কারখানায় সব জায়গায় পপুলেশান প্লানিং আমাদের করতে হবে। এবং পপুলেশান কন্ট্রোল আমাদের করতে হবে। আপনাদের দুর্নীতি, ঘুষ, চোরাকারবারী, মুনাফাখোরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং সংগ্রাম করতে হবে। আমাদের কী করতে হবে? আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাঙালি জাতি যে প্রাণ, যে অনুপ্রেরণা নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল সে প্রাণ, সেই অনুপ্রেরণার মতবাদ নিয়ে অগ্রসর হতে হবে, দেশের দুঃখী মানুষকে মুক্তি দেওয়ার জন্যে, তাদের মুখে হাসি ফোটাবার জন্যে।

স্পিকার সাহেব, এ জন্যে আজ আপনার মাধ্যমে যারা যেখানে আছেন, যারা দেশকে ভালোবাসেন, সকলকে আমি আহ্বান করব আসুন, দেশ গড়ি। আসুন, দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাই। আসুন, আমরা দেশের মানুষের দুঃখ দূর করি। তা না করতে পারলে ইতিহাস আমাদের মুখে কলঙ্ক লেপন করবে। স্পিকার সাহেব, বড় দুঃখ, এই হাউসের আমি লিডার ছিলাম, পার্টির আমি লিডার তখন আমি এখানে এই সিটে বসতাম। আমার সহকর্মীরা আজ আমাকে– আমার মেম্বারশিপ কেড়ে নিয়ে গেছেন, আমি মেম্বার থাকতে পারলাম না! আমাকে প্রেসিডেন্ট করে দিয়েছে এবং আজকে নতুন সিস্টেমে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। সিস্টেম পরিবর্তন করেই আমরা সাকসেসফুল হতে পারব না। যদি আপনারা চেষ্টা না করেন এবং আপনারা যদি নিঃস্বার্থভাবে— যেভাবে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিলেন, নিঃস্বার্থভাবে ২৫ বছর সংগ্রাম করেছিলেন, সেই সংগ্রাম আপনারা না করেন, অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে গঠনমূলক কাজে, দেশ গড়ার কাজে, উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে; তাহলে খুবই ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি এ অনুরোধ করব: চলুন, আমরা অগ্রসর হই। বিসমিল্লাহ করে আল্লাহর নামে অগ্রসর হই। ইনশাল্লাহ আমরা কামিয়াব হবো। খোদা আমাদের সহায় আছেন। এত বড় দুধর্ষ, এত বড় শক্তিশালী, এত বড় বন্দুক, এত কামান, এত মেশিনগান, এত পাকিস্তানি সৈন্য, এত বড় তথাকথিত শক্তিশালী আইয়ুব খান, এহিয়া খান, ইস্কান্দার মির্জা, চৌধুরী। মোহাম্মদ আলী বাংলার মানুষকে অত্যাচার করতে চেষ্টা করেছে বন্দুক দিয়ে, তার বিরুদ্ধে বিনা অস্ত্রে আপনাদের নিয়ে সংগ্রাম করে শেষ পর্যন্ত যদি উৎখাত করতে পারি, তাহলে কিছু দুর্নীতিবাজ, কিছু ঘুষখোর, কিছু শোষক,কিছু ব্ল্যাক মার্কেটার্স বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে পারব না- এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। যদি সকলে মিলে আপনারা নতুন প্রাণ, নতুন মন নিয়ে খোদাকে হাজির নাজের করে নিজের আত্মসমালোচনা করে, আত্ম-সংশোধন করে, আত্মশুদ্ধি করে যদি ইনশাল্লাহ কাজে অগ্রসর হন, বাংলার জনগণকে আপনারা যা বলবেন তারা তাই করবে। আপনাদের অগ্রসর হতে হবে। ইনশাল্লাহ আমি কামিয়াব হবো। আর আপনাদের সকলকে আমি মোবারকবাদ জানাই। আমার পার্টি আছে এবং আপনারা পার্টির সদস্য। বহু দুঃখের দিনে আপনাদের নিয়ে চালিয়েছি। সুখের মুখ আমরা দেখি নাই। এ ক্ষমতায় যে আমরা আছি, এই ক্ষমতা সুখ নয়। এ বড় কষ্ট, বড় কণ্টকাকীর্ণ এই ক্ষমতা, তবু আমাদের আজ কাজ করতে হবে।

স্পিকার সাহেব, আমি সকলকে ধন্যবাদ দিই। আমি আপনাকে ধন্যবাদ দিই, স্টাফকে ধন্যবাদ দিই, যারা কর্মচারী তাদের ধন্যবাদ দিই, সহকর্মীদের ধন্যবাদ দিই, সকলকে ধন্যবাদ দিই। আমি আপনাদের একজন এবং একজন হিসেবে থাকব। আমি আপনাদের পাশে থাকব। আপনাদের মধ্যে থাকব। এবং আপনাদের নিয়ে কাজ করব। বিশেষতঃ আমাদের সেই গভর্নমেন্ট থাকবে, মন্ত্রী থাকবে, কাজ-কর্ম করবে, কোনো অসুবিধা হবার কারণ নেই। তবে কথা হলো এই যে, সবচেয়ে বড় কাজ আমাদের We have to work sincerely and honeslty for the emancipation of the poor people of the country, আমি আপনাদের আবার ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিচ্ছি।

জয় বাংলা।

 

সূত্রঃ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ– শেখ হাসিনা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ